সময় হয়েছে, আজান হয়নি: ইফতারের বিধান কী?

রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইফতার। সূর্যাস্তের পর ইফতার করা ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান। তবে অনেক সময় আজান দিতে দেরি হয়। ফলে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, ইফতারের সময় হলেও কি আজান শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করা জরুরি? নাকি নির্ধারিত সময় হলেই ইফতার করা যায়? আবার কেউ কেউ ভুলবশত আজানের আগেই ইফতার করে ফেলেন। তাহলে তাদের রোজার হুকুম কী?



ইফতারের সময় নির্ধারণে মূলনীতি  

ইসলামে ইফতার করার মূল ভিত্তি হলো সূর্যাস্তের সময়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রাত এদিক থেকে আসে এবং দিন ওদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য অস্ত যায়, তখনই রোজাদার ইফতার করবে। (সহিহ বুখারি: ১৯৫৪, সহিহ মুসলিম: ১১০০)

 এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইফতার শুরু করার মূল নির্ধারক হলো সূর্যাস্ত, আজান নয়। তবে সমাজের অধিকাংশ মানুষ আজানের মাধ্যমেই ইফতারের সময় বোঝেন। এজন্য সাধারণত আজান শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উত্তম।  

আজান দিতে দেরি হলে করণীয় 

 
অনেক সময় দেখা যায়, ইফতারের নির্ধারিত সময় হয়ে গেলেও আজান দিতে কিছুটা দেরি হয়। এটি মসজিদের মুয়াজ্জিন বা ইমামের ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে হতে পারে, আবার কোনো কারিগরি সমস্যার কারণেও দেরি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় কী?  

 
১. বিশ্বস্ত সময়নির্ধারণী দেখে ইফতার: যেহেতু ইসলামে সূর্যাস্তের সময়েই ইফতার করতে বলা হয়েছে, তাই বিশ্বস্ত সময়নির্ধারণী দেখে ইফতার করা জায়েজ। বিশ্বস্ত ইসলামিক ক্যালেন্ডার বা অনুমোদিত সময়সূচির ওপর ভিত্তি করে ইফতার করলে কোনো সমস্যা নেই।  
 
২. অযথা সন্দেহ না করা:  ইসলামে অতিরিক্ত সন্দেহ প্রবণতা পরিহার করতে বলা হয়েছে। যদি আপনি নিশ্চিত হন যে সূর্যাস্ত হয়ে গেছে, তাহলে ইফতার করতে পারেন। তবে নিশ্চিত না হলে আজান পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উত্তম।  
 

ভুল করে আজানের আগেই ইফতার করলে করণীয়  


অনেক সময় কেউ কেউ ভুলবশত মনে করেন, ইফতারের সময় হয়ে গেছে এবং আজানের আগেই ইফতার করে ফেলেন। পরে জানতে পারেন, সময়ের আগেই ইফতার হয়ে গেছে। তখন করণীয় কী?  এ বিষয়ে হাদিস ও ফিকাহবিদদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যদি কেউ ভুলবশত সময়ের আগেই ইফতার করে ফেলে, তাহলে শুধু ওই দিনের রোজার কাজা করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।  

 
হজরত আসমা (রা.) বলেন, 

রসুল (সা.)-এর যুগে একদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। আমরা সূর্য ডুবে গেছে ভেবে ইফতার করলাম। কিছুক্ষণ পর মেঘ কেটে গেলে দেখা গেল, সূর্য তখনো রয়েছে।  
(সহিহ বুখারি: ১৯৫৯)  

এই ঘটনায় রসুলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে শুধু কাজা করতে বলেছেন, কাফফারা দিতে বলেননি।  
আজান না শোনা অবস্থায় ঘড়ি দেখে ইফতার করা যাবে? অনেক সময় দেখা যায়, কেউ এমন জায়গায় অবস্থান করছেন, যেখানে আজানের শব্দ শোনা যায় না। তখন করণীয় কী? ফিকাহবিদগণ বলেন, বিশ্বস্ত সময়নির্ধারণী দেখে ইফতার করা বৈধ। যদি নির্ভরযোগ্য ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সূর্যাস্ত হয়ে যায়, তাহলে আজান শোনার অপেক্ষা না করলেও চলবে। তবে সন্দেহ থাকলে একটু অপেক্ষা করাই ভালো।  
 
ইসলামে ইফতারের জন্য আজান অপেক্ষা নয়, বরং সূর্যাস্তই মূল নির্ধারক। আজান কেবল মানুষকে সময় জানানোর মাধ্যম। তাই নির্ভরযোগ্য সময়নির্ধারণী দেখে ইফতার করা বৈধ। তবে আজানের আগেই ভুলবশত ইফতার হয়ে গেলে শুধু কাজা করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। এ বিষয়ে সন্দেহ এলে অপেক্ষা করাই উত্তম।

 4