ফিলিস্তিন: ইতিহাসের গর্ভে হারানো স্বদেশ ও বর্তমানের যুদ্ধক্ষেত্র
শুরু যেখানে: একটি চাবির গল্প
"এই চাবিটি ১৯৪৮ সালের। এটি কোনো সাধারণ চাবি নয় — এটি একটি বাড়ির, যে বাড়িটির আজ অস্তিত্ব নেই। ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারগুলোর ঘরোয়া জিনিসপত্রের মধ্যে এমন লক্ষাধিক চাবি সংরক্ষিত আছে। প্রতিটির গায়ে জড়িয়ে আছে একেকটি বেদনার ইতিহাস: ‘দাদু বলতেন, ফিরে যাবোই একদিন।’ ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ‘একদিন’ আজও অধরা।"
অধ্যায় ১: যখন ফিলিস্তিন ছিল ‘সবার’
২০শ শতকের শুরুর দিকে ফিলিস্তিন ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীন এক বহুত্ববাদী সমাজ। জেরুসালেম, হেবরন, নাবলুসের গলিপথে একসঙ্গে হাঁটত মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা। স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের ভাষায়, “একটি জলপাই গাছের নিচে বসে ইহুদি বন্ধুর সাথে আমরা রোজ ইফতার ভাঙতাম।”
কিন্তু ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বালফোরের একটি চিঠি সব বদলে দেয়। মাত্র ৬৭ শব্দের সেই ‘ব্যালফোর ঘোষণা’ ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য ‘জাতীয় আবাস’ গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়। শুরু হয় ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইহুদি অভিবাসনের স্রোত। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে — ফিলিস্তিনিরা যাকে বলে ‘নাকবা’ (মহাপ্রলয়) — সেদিন ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ৭০০,০০০ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়, ৫৩০টি গ্রাম মাটির সাথে মিশে যায়।
অধ্যায় ২: দখলের যন্ত্রণা: গাজা-পশ্চিম তীরের ডায়েরি
গাজা উপত্যকা, যাকে জাতিসংঘ বলে ‘দুনিয়ার সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার’। ৩৬৫ বর্গকিলোমিটারের এই জেলখানায় ২৩ লাখ মানুষ। ৯০% পানি দূষিত, ৪৭% বেকারত্ব। ২০২১ সালের মে মাসে ১১ দিনের বোমাবর্ষণে ২৬০ শিশু মারা যায়।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের নামে প্রতিদিনই জবরদখল হচ্ছে ফিলিস্তিনি জমি। চেকপয়েন্টে অপেক্ষা করতে গিয়ে প্রসব বেদনায় মারা গেছেন অনেক মা। স্থানীয় যুবক রামির কথায়, “আমার জন্মই হয়েছে চেকপয়েন্টের লাইনে, মৃত্যুও হয়তো এখানেই।”
অধ্যায় ৩: প্রতিরোধের নতুন ভাষা
ফিলিস্তিনি সংগ্রাম আজ কামান-বোমা নয়, বরং ‘ক্যামেরা’ ও **‘কবিতা’**য়। গাজার এক তরুণী ডাক্তার, যিনি টিকটকে শেখান কীভাবে বোমার আঘাতে রক্তক্ষরণ থামাতে হয়। শিল্পীরা প্রাচীরে আঁকেন গ্রাফিতি: “আমার দেশের নাম মানচিত্রে নেই, কিন্তু আমার হৃদয়ে আছে।”
বিশ্বজুড়ে BDS (বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা) আন্দোলন চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি সমর্থকরা। অথচ ইসরায়েল প্রতি বছর পায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার মার্কিন সাহায্য — প্রতি মিনিটে ১.৩ মিলিয়ন ডলার!
অধ্যায় ৪: প্রশ্ন যেটা ইতিহাসকে পীড়িত করে
ইসরায়েলি শিশু vs. ফিলিস্তিনি শিশু — মানবাধিকারের পাল্লায় ওজন কি আলাদা? জাতিসংঘের ৭৫% রেজুলিউশন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে, তবু যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো সব থামিয়ে দেয়। ফিলিস্তিনি লেখক মুরিদ বারঘুতির কথায়, “আমরা ইতিহাসের সেই শিশু, যাকে প্রশ্ন করা হয়: তুমি কী চাও? উত্তরে বলি: শুধু বাঁচতে!”
শেষ পাতা: জলপাই গাছের শিক্ষা
ফিলিস্তিনিরা জলপাই গাছকে ভালোবাসে। কারণ এর শিকড় মাটির গভীরে থাকে — ডালপালা কেটে ফেললেও আবার গজায়। ২০২৩ সালে গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসে একটি ভাইরাল ভিডিও: এক কিশোরী মাটির নিচ থেকে একটি জলপাই গাছের চারা উদ্ধার করে বলে, “এই দেখো, আমরা মরিনি!”
আপনার করণীয়:
এই গল্পটি শেয়ার করুন। কারণ ফিলিস্তিন শুধু ভূগোল নয় — এটি মানবতার মিরর টেস্ট।
3